AhlulBayt News Agency

source : al Mustafa
Tuesday

27 January 2015

10:16:33 AM
667463

Full Text;

Message of Ayatollah Khamenei to the Youth in Europe and North America in BENGALI বাঙ্গালী

Message of Ayatollah Khamenei to the Youth in Europe and North America in BENGALI

ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার তরুণদের উদ্দেশ্যে আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর বানী
 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার তরুণদের উদ্দেশ্যে।

ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ও পশ্চিমের কিছু দেশের অনুরূপ ঘটনাবলী তোমাদের সাথে সরাসরি কথা বলতে আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমি তোমাদের (তরুণদেরকে) উদ্দেশ্য করে কথা বলছি, এই কারণে না যে তোমাদের পিতামাতাকে আমি উপেক্ষা করছি, বরং এই কারণে যে তোমাদের জাতি ও দেশের ভবিষ্যত তোমাদের হাতে; আর একারণেও যে তোমাদের মধ্যে সত্যানুসন্ধানের তেজোদীপ্ত অনুভূতি ও একাগ্রতা দেখতে পেয়েছি।

তোমাদের পলিটিশিয়ান ও স্টেটসম্যানদেরকে উদ্দেশ্য করেও আমি লিখছি না, কারণ আমি বিশ্বাস করি তারা সচেতনভাবে ন্যায় ও সত্যের পথ থেকে পলিটিক্সের পথকে আলাদা করে রেখেছে।

তোমাদের সাথে আমি ইসলাম নিয়ে কথা বলতে চাই, বিশেষতঃ তোমাদের কাছে যেটাকে ইসলাম বলে উপস্থাপন করা হয়, সেটা নিয়ে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর থেকে শুরু করে গত প্রায় দুই দশক যাবৎ এই মহান ধর্মকে ভয়ঙ্কর শত্রুর আসনে বসানোর বহু চেষ্টা করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, মানুষের মনে ভয় ও ঘৃণার অনুভূতি উসকে দিয়ে সেটার লাভ উঠানোর এক দীর্ঘ ইতিহাস আছে পশ্চিমা রাজনীতিতে।

যে বিভিন্ন ফোবিয়া দিয়ে পশ্চিমের জাতিগুলোকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, তা নিয়েও আমি এখানে কথা বলতে চাই না। ইতিহাসের সাম্প্রতিক সূক্ষ্ম বিশ্লেষণগুলোর উপর এক নজর দিলেই তোমরা বুঝতে পারবে যে, অন্যান্য জাতি ও সংস্কৃতির সাথে পশ্চিমা সরকারগুলোর কপট ও মুনাফিকি আচরণের নিন্দা করা হয়েছে অধুনা ইতিহাসে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ইতিহাস দাসত্বের কারণে লজ্জিত, ঔপনিবেশিক সময়ের কারণে বিব্রত এবং যাদের গায়ের রঙ ভিন্ন ও যারা খ্রিষ্টান নয়, তাদের উপর নির্যাতনের দায়ে অপরাধী। কাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টদের মাঝে ধর্মের নামে অথবা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাতীয়তার নাম করে ঘটানো রক্তপাত নিয়ে তোমাদের গবেষক ও ইতিহাসবেত্তাগণ গভীরভাবে লজ্জিত। এগুলি প্রশংসনীয় নয়।

এই লম্বা তালিকার এক ক্ষুদ্র অংশ উল্লেখ করার মাধ্যমে আমি ইতিহাসের নিন্দা করছি না; বরং আমি চাই তোমরা তোমাদের বুদ্ধিজীবিদেরকে জিজ্ঞাসা করো যে, কেনো পশ্চিমের জনগণের বিবেক জেগে উঠতে কয়েক দশক বা শতক লাগে। সমন্বিত বিবেক (collective conscience) কেনো সুদূর অতীতের উপরই শুধু প্রযোজ্য, কেনো বর্তমান সমস্যাগুলোর উপর নয়? কেনো ইসলামী চিন্তা ও সংস্কৃতিকে স্বাগতম জানানোর মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে গণসচেতনতা ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়?

তোমরা খুব ভালো করেই জানো যে, ঐ সমস্ত সুবিধাবাদী জালিমের সাধারণ ভিত্তি ছিলো "অন্যদের” ব্যাপারে কাল্পনিক ভীতি ও ঘৃণা ছড়ানো, অপরকে অপমান করা। এখন আমি চাই তোমরা নিজেদেরকে প্রশ্ন করো, কেনো ঘৃণা ও "ফোবিয়া" ছড়ানোর পুরনো পলিসি ইসলাম ও মুসলমানদেরকে নজিরবিহীন তীব্রতাসহকারে আক্রমণ করেছে। কেনো দুনিয়ার ক্ষমতাশালীরা চায় যে ইসলামী চিন্তাধারা হারিয়ে যাক, লুক্কায়িত থাকুক? ইসলামের কোন্ কনসেপ্ট সুপার পাওয়ারদের পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটায় এবং ইসলামের প্রকৃত চেহারাকে বিকৃত করার ছায়াতলে কোন্ স্বার্থকে রক্ষা করা হয়? অতএব, আমার প্রথম অনুরোধ হলো : ইসলামের চিত্রকে মলিন করার পিছনের সুদূরপ্রসারী এই উদ্দেশ্য নিয়ে পড়াশুনা ও গবেষণা করো।

আমার দ্বিতীয় অনুরোধ হলো, ইসলাম সম্পর্কে পূর্বনির্ধারিত ও মিথ্যা প্রচারণার বন্যার প্রতিক্রিয়ায় তোমরা এই ধর্মটির সম্পর্কে সরাসরি জানার চেষ্টা করো। একটি সুস্থ যুক্তিবাদী মনের দাবী এই যে, তোমাদেরকে তারা ভয় দেখিয়ে যা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে তোমরা সেটার প্রকৃতি ও ধরণ সম্পর্কে জানবে।

আমার ব্যাখ্যা কিংবা ইসলামের অন্য কোনো ব্যাখ্যা গ্রহণ করতেও আমি জোর করছি না। আমি যা বলতে চাই তা হলো: বর্তমান দুনিয়ার এই প্রগতিশীল বাস্তবতার সাথে পরিচয় পক্ষপাতদুষ্টতা ও ঘৃণার মাধ্যমে হতে দিও না। তাদের নিজেদের ভাড়া করা সন্ত্রাসীদেরকে ইসলামের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত করাতে দিও না।

ইসলামের প্রাথমিক ও মৌলিক উৎস থেকে ইসলামের জ্ঞান অর্জন করো। কুরআন ও মহান নবীর জীবন থেকে ইসলাম সম্পর্কে তথ্য নাও। আমি প্রশ্ন করতে চাই, তোমরা কখনো মুসলমানদের কুরআন সরাসরি পড়েছো কিনা। ইসলামের নবীর শিক্ষা ও তার মানবিক, নৈতিক মতাদর্শ নিয়ে তোমরা গবেষণা করেছো কিনা? মিডিয়া ছাড়া আর কোনো উৎস থেকে তোমরা কখনো ইসলামের বাণী গ্রহণ করার চেষ্টা করেছো কিনা?

তোমরা কি কখনো নিজেকে জিজ্ঞাসা করে দেখেছো, দুনিয়ার ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিবৃত্তিক ও বৈজ্ঞানিক সভ্যতাকে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করেছে কোন আদর্শের উপর ভিত্তি করে? কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে? বিশিষ্ট সব বৈজ্ঞানিক ও চিন্তাবিদের উত্থান ঘটিয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে?

আমি চাই, তোমরা যেনো এইসব মানহানিকর ও আক্রমণাত্মক প্রচারণাকে বাস্তবতা ও তোমাদের মাঝে আবেগের বাঁধ সৃষ্টি করতে না দাও, নিরপেক্ষ বিচার করার সম্ভাবনাকে কেড়ে নিতে না দাও। বর্তমান যুগে যোগাযোগ-মাধ্যমগুলো ভৌগলিক সীমারেখাকে তুলে দিয়েছে। সুতরাং, তারা যেনো তোমাদেরকে মনগড়া চিন্তার সীমারেখায় বন্দী করে না ফেলে।

যদিও কেউ একা একা এই শূন্যস্থানগুলো পূরণ করতে পারবে না, তবুও তোমরা প্রত্যেকে চিন্তা ও সৌন্দর্যের এক সেতুবন্ধন তৈরী করতে পারো, যেনো নিজেদেরকে ও পারিপার্শ্বকে আলোকিত করতে পারো। যদিও ইসলাম ও তোমাদের তরুণদের মাঝে সৃষ্ট এই পূর্বপরিকল্পিত চ্যালেঞ্জ অযাচিত, কিন্তু এটা তোমাদের আগ্রহী ও অনুসন্ধিৎসু মনে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে। এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার প্রচেষ্টা তোমাদেরকে নতুন সত্য আবিষ্কারের উপযুক্ত সুযোগ এনে দেবে।

তাই, ইসলামের সঠিক, সত্য ও নিরপেক্ষ ধারণা অর্জনের এই সুযোগ ছেড়ে দিও না। যেনো আশা করা যায়, সত্যের প্রতি তোমাদের দায়িত্ববোধের কারণে ভবিষ্যত প্রজন্ম ইসলাম ও পশ্চিমা দুনিয়ার মধ্যে এই যোগাযোগের ইতিহাসকে আরো পরিচ্ছন্ন বিবেক ও কম বিরোধিতাসহকারে লিখতে পারে।

 

সাইয়্যেদ আলি খামেনেয়ী

২১শে জানুয়ারি, ২০১৫।




/129